রতন রায় :রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় আবুল খায়ের কোম্পানির অফিসে তালা ভেঙে ঢুকে নাইটগার্ডকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লুটের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত হয়েছেন তপন সরকার (৫৫), যিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে নাইটগার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নিহত তপন সরকার ধীরেন্দ্রনাথ সরকারের পুত্র এবং রাজারহাট উপজেলার দলদলিয়া দাস পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় ৮ বছর ধরে আবুল খায়ের কোম্পানিতে নাইটগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার মাসিক বেতন ছিল ৭ হাজার টাকা। তার স্ত্রী মোনা রানী বর্তমানে শোক ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
গভীর রাতে হত্যাকাণ্ড, ভোরে মিলল রক্তাক্ত মরদেহ
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা অফিসের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় দায়িত্বে থাকা নাইটগার্ড তপন সরকার বাধা দিতে গেলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর অফিসে থাকা নগদ টাকা লুট করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
ঘটনার রাতে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের কিছু আগে তপন সরকার তার পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন। এরপর ভোর আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে তার স্ত্রী মোনা রানী অফিসে এসে দেখতে পান অফিসের তালা ভাঙা এবং কয়েকজন কর্মচারী বাইরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে।
ভেতরে প্রবেশ করেই তিনি দেখতে পান, মেঝেতে পড়ে আছে তার স্বামীর রক্তাক্ত নিথর দেহ। ভয়ে ও শোকে তিনি বাইরে এসে উপস্থিতদের কাছে জানতে চাইলে কেউ কোনো সদুত্তর দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ম্যানেজারের নীরবতা নিয়ে সন্দেহ
ঘটনার সময় অফিসে কোম্পানির ম্যানেজার মো. লিটন রহমান উপস্থিত থাকলেও তিনি নীরব ছিলেন এবং নিহতের স্ত্রীর প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী মোনা রানী অভিযোগ করে বলেন,
“আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে কোম্পানির ভেতরের লোকজন, বিশেষ করে ম্যানেজারের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে আমি মনে করি। আমি এই হত্যার সঠিক বিচার চাই।”
সহকর্মী ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ, সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি
নিহতের সহকর্মীরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন। এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,
“রাজারহাটে এরকম নৃশংস ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আমরা চাই, দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেলা হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ও লুটের ঘটনায় এখনো রহস্য কাটেনি। স্থানীয়রা দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
রতন রায়: কুড়িগ্রাম
রাজারহাট প্রতিনিধি

Post a Comment