
আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে তাদের লাশ রাজধানীর রায়েরবাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।
পরাজয় আসন্ন বুঝতে পেরে হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজকে নিশ্চিহ্ন করে উদীয়মান বাংলাদেশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করার লক্ষ্যে গণহত্যা চালায়। নিহত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন ড. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান, এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক ও সেলিনা পারভীন প্রমুখ।
জাতীয় কর্মসূচি ও রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং সকাল ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর ও রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মদান আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছে। তাদের আদর্শ ও পথ অনুসরণ করে একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনই তাদের আত্মত্যাগের সার্থকতা।”
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। তারা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের নির্দেশিত আদর্শ অনুসরণ করে আমরা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।”
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য নির্ভর বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। স্মৃতিসৌধ এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করেছে।
দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনা ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

Post a Comment