Top News

জামালগঞ্জ প্রেসক্লাব উন্নয়ন প্রকল্পের ২ টন চাল ‘উধাও’ তদন্তে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ




 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের নামে ত্রাণ বরাদ্দকৃত ২ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসক্লাবের সদস্য মো. শাহীন আলম জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়ে অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জি.আর/ত্রাণ কর্মসূচির আওতায় প্রেসক্লাব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে একজনকে অনিয়মিতভাবে সদস্য দেখিয়ে প্রকল্পের সভাপতি করা হয়। পরে তিনি গত মে মাসে পুরো ২ টন চাল তুলে নিলেও সাত মাসে ক্লাবের নামে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়-ভাঙা কয়েকটি পুরনো চেয়ার ছাড়া উন্নয়নমূলক কোনো কাজের চিহ্ন নেই। প্রেসক্লাবের ক্যাশিয়ারের কাছে কোনো টাকা নেই, বরাদ্দের হিসাব সম্পর্কে ক্লাবের সভাপতি ও সদস্যরা কিছুই জানেন না। প্রকল্প সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন-“আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়েছে, আমাকে হেয় করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”

তবে অধিকাংশ সদস্যের বক্তব্য ভিন্ন। তারা জানান- প্রকল্প সভাপতির প্রেসক্লাবের সদস্য নিয়োগ ছিল গঠনতন্ত্রবহির্ভূত, বরাদ্দের ব্যাপারে অনেক সদস্যই জানতেন না, আর চাল কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই।



তাদের প্রশ্ন-“চাল গেল কোথায়?”

তথ্য-প্রমাণ মতে চাল উত্তোলন হয়েছে, কিন্তু প্রেসক্লাবের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় আত্মসাতের আশঙ্কা জোরদার হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত ও হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।

জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি (২০২৫-২০২৬) তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ বলেন, “প্রত্যেক সংগঠনেরই একটি গঠনতন্ত্র থাকে, প্রেসক্লাবেরও নিজস্ব গঠনতন্ত্র রয়েছে। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা অতীতে প্রেসক্লাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আমার প্রতীয়মান হয়-গঠনতন্ত্রবহির্ভূত ক্ষোভের কারণেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “বরাদ্দকৃত কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ২ টন চাল উত্তোলন করেন এবং তা বিক্রি করে অর্থ নিজের কাছে রাখেন। বিষয়টি জানার পর আমি তাকে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষের কাছে অর্থ জমা দিতে বললেও তিনি গড়িমসি করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার বিরোধ তৈরি হয়।”

সভাপতি প্রদীপ জানান, পরবর্তীতে প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনজনকে মালামাল ক্রয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি।

কোষাধ্যক্ষ মহসিন কবির অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প অনুমোদনের সাত মাস অতিবাহিত হলেও তাঁর কাছে এখনো কোনো অর্থ পৌঁছেনি। তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতিও অবগত আছেন। মহসিন কবির আরও বলেন, দুই-তিন দিন আগে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁকে জানানো হয় যে প্রকল্পের মালামাল ইতোমধ্যে ক্রয় করা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন, “মালামাল মিস্ত্রিদের কাছে তৈরি করার জন্য দেওয়া হয়েছে এবং অদ্ধ কিছু মালামাল প্রেসক্লাবে ঢুকানো হয়েছে।”

অভিযোগকারী সাংবাদিক বলেন, “প্রেসক্লাবের নামে সরকারি ত্রাণ নিয়ে এমন অনিয়ম শুধু লজ্জাজনক নয়, সাংবাদিকতার ভাবমূর্তির জন্যও হুমকি। দ্রæত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

স্থানীয় সাংবাদিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মাঝে এখন একটাই প্রশ্ন- “ত্রাণের ২ টন চাল গেল কোথায়?”



মো. শাহীন আলম,

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।

০২.১১.২০২৫

Post a Comment

Previous Post Next Post