মো. শাহীন আলম, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোনো ধরনের গাফিলতি, অনিয়ম কিংবা দায়সারা কাজ বরদাস্ত করা হবে না—এমন কঠোর বার্তা দিয়েছেন সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী (অতিরিক্ত সচিব)। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনার পিআইসি ও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ১৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা, মান ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করতে হবে, কারণ হাওর রক্ষা বাঁধের সঙ্গে কৃষকের ফসল ও জীবন-জীবিকা সরাসরি জড়িত।
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্রকল্প সাইটের খোলা জায়গায় বরাদ্দকৃত অর্থ, মাটির পরিমাণ ও কাজের বিস্তারিত তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন; সাইট রেজিস্টার বুক, ওয়ার্ক অর্ডারের কপি, ফিলিং চার্ট ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফিতা সার্বক্ষণিক সংরক্ষণ; বাঁধের উপরিভাগের পুরনো মাটি ৬ ইঞ্চি আলগা করে ঘাস-আগাছা পরিষ্কার করে নতুন মাটি দিয়ে দৃঢ় বন্ধন তৈরি করা; সর্বোচ্চ এক ফুট উচ্চতায় লেয়ার বাই লেয়ার মাটি ভরাট করে এক্সাভেটর দিয়ে কম্পেকশন নিশ্চিত করা।
এছাড়া বাঁধের স্লোপে ৭ কেজি ওজনের দুরমুস দিয়ে কম্পেকশন, পর্যাপ্ত দুরমুস মজুদ রাখা, টো লাইন থেকে ন্যূনতম ১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে মাটি সংগ্রহ, ফিলিং চার্ট অনুযায়ী বাঁধের উচ্চতা ও ঢাল নির্ধারণ, ভিজা-কাদা ও বালুমাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ, বড় ঢিলা ভেঙে মাটি ছড়িয়ে দেওয়া এবং কাজ শেষে সঠিক ড্রেসিং সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন তিনি।
বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ঘাস লাগানোর আগে প্রোপে পাম্পের মাধ্যমে পানি দিতে হবে এবং ঘাস সতেজ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সেচ অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বাঁধের সব কাজ শেষ করতে হবে। পাশাপাশি হাওরের ধান সম্পূর্ণ কর্তন না হওয়া পর্যন্ত বাঁধের সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। পিআইসি কমিটির সদস্যদের মোবাইল ফোন সার্বক্ষণিক সচল রাখার নির্দেশও দেন তিনি।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মতিউর রহমান খান, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নূর, জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বন্দে আলী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা।
বাঁধ পরিদর্শন শেষে ১নং বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট–২০২৬ উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘হ্যাঁ ভোট’ ও ‘না ভোট’ কেন অনুষ্ঠিত হবে, কোন কোন বিষয়ে গণভোট হবে এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়। গণভোট বিষয়ে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে উঠান বৈঠক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম, ইউএনও মুশফিকীন নূর, উপ-পরিচালক মো. মতিউর রহমান খান এবং বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী।
এদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অতিদরিদ্র, অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়। বিতরণ শেষে বিভাগীয় কমিশনার সাচনা বাজার পরিদর্শন করেন।
দিনব্যাপী সফরের অংশ হিসেবে তিনি জামালগঞ্জ উপজেলা হলরুমে উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় বিভিন্ন দপ্তরের সমস্যা, সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি ও মামলার নথি পর্যালোচনা করেন।
এ সময় জামালগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত শিশু পার্ক ও সংস্কারকৃত জামালগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার। এছাড়া এলজিইডি কর্তৃক নির্মাণাধীন উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজও পরিদর্শন করেন তিনি।
মো. শাহীন আলম, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।
২৮.১২.২০২৫

Post a Comment