মো: এ কে নোমান, নওগাঁঃ
নওগাঁ জেলায় শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে হঠাৎ করেই বয়ে যাওয়া প্রবল ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পত্নীতলা, মহাদেবপুর ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা। কয়েক মিনিটের এই তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ফসলের ক্ষেত ও গাছপালা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেল চারটার দিক থেকে আকাশে কালো মেঘ জমতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া, তার সঙ্গে বজ্রপাত ও প্রবল বৃষ্টি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝড়টি ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে যায়। এতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে, ঘরবাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে যায় এবং গাছপালা উপড়ে পড়ে সড়কে চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।
মহাদেবপুর উপজেলার পশ্চিম গোসাইপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজউদ্দৌলা চৌধুরী জানান, “বিকেল চারটার পর পরই হঠাৎ করে আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায়। কিছুক্ষণ পর প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়, সঙ্গে ভয়ংকর মেঘের গর্জন। অল্প সময়ের মধ্যেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এভাবে আচমকা ঝড়-বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও গাছপালা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পত্নীতলা উপজেলার মাতাজী, ভাবিচা মোড়, কাঁটাবাড়ি এবং মহাদেবপুর উপজেলার বিলশিকারী ও দেওয়ানপুর এলাকায় ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আকস্মিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে এখনো প্রশাসনের কেউ তেমনভাবে দাঁড়ায়নি। অনেকের ঘরের চালা উড়ে গেছে, কেউ কেউ রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে।
পত্নীতলার ভাবিচা গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল জানান, “বৃষ্টি আর ঝড়ে আমার ধানের ক্ষেতের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। গাছ উপড়ে পড়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এখন কষ্ট করে আবার চাষ করতে হবে।”
অন্যদিকে, মহাদেবপুরের বিলশিকারী এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, “আমাদের দোকানের টিনের চাল উড়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে ভয় লাগে। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, তাহলে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেতাম।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, হঠাৎ করে এমন ঝড়-বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বছরের এই সময় এমন ঝড় খুব একটা দেখা যায় না। আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হঠাৎ সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহের কারণেই এই ঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নওগাঁসহ রাজশাহী বিভাগের কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয়রা দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Post a Comment