Top News

কৃষি ও জলাবদ্ধতা নিরসনে জামালগঞ্জে গজারিয়া খাল পুনঃখননের উদ্বোধন

 



মো. শাহীন আলম, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :

সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নে কৃষি উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) উদ্যোগে গজারিয়া খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৫১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২টায় গজারিয়া বাজার এলাকায় আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “কৃষকরা আমাদের দেশের মূল শক্তি। হাওর এলাকার কৃষকদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিক। কৃষকের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, গজারিয়া খাল পুনঃখননের মাধ্যমে হাওর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বিভাগ-১, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। তিনি বলেন, “গজারিয়া খাল পুনঃখননের ফলে পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান নিশ্চিত করা হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।”

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের সদস্য নুরুল হক আফিন্দি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজ এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যার কথা শুনে আসছেন। বিগত ১৭ বছর এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সমস্যাটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে আজ গজারিয়া খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন সম্ভব হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার বলেন, ডালিয়ার খাল খনন করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও ভালো ফল পাওয়া যেত। চলতি অর্থবছরে সম্ভব না হলে আগামী অর্থবছরে ডালিয়ার খাল খননের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (জামালগঞ্জ পানি উন্নয়ন শাখা-১) মো. জাহিদুল ইসলাম জনি, বাপাউবো’র কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য, জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম বৃহৎ হাওর। বর্ষা মৌসুম শেষে এখানে প্রধানত বোরো ধান চাষ হয়। এক ফসলি এই হাওরের চাষযোগ্য জমির ওপর হাওরসংলগ্ন অন্তত ৪০টি গ্রামের কৃষক ধান উৎপাদনের জন্য নির্ভরশীল। তবে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কারণে হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমিতে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চলতি বছরও জলাবদ্ধতার কারণে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গড় উৎপাদন হিসেবে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম হতে পারে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রকল্পটির কাজের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও দ্রুত খনন কাজ সম্পন্ন করা গেলে চলতি মৌসুমেই বোরো ধান চাষ সম্ভব হবে। এজন্য তারা প্রকল্পটি দ্রুত ও মানসম্মতভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর তদারকির দাবি জানিয়েছেন।

২৭.১২.২০২৫

Post a Comment

Previous Post Next Post