সুমন হোসেন, ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার ধুনটে পাঁচথুপি নছরতপুর জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর জাহিদুল ইসলামের বেশ কয়েকটি টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার ৩০ সেপ্টেম্বর তার এই ভিডিও গুলো ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, তার ব্যবহৃত ইংরেজী শব্দে জাহিদ চৌধুরী নামক টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে ল্যাব অপারেটর জাহিদুল ইসলাম নিজের বেশ কিছু অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে আপলোড করেছেন। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তার এমন কান্ডে এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজও হতবাক। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকও পড়েছেন সমালোচনার মুখে। অনেকে বলছেন প্রধান শিক্ষকের আত্মীয় হওয়ায় বিগত দিনে পরিক্ষার হল রুমে ছাত্রছাত্রীদের ভিডিও করে টিকটক বানিয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। এতে আপত্তি জানিয়েছেন ছাত্রীদের অবিভাবকরা। প্রধান শিক্ষক এসব বিষয় অস্বীকার করে বলেন, বিগত দিনের তার এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি অবগত নই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর জাহিদুল ইসলাম উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের ভুবনগাঁতি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। জাহিদুল ইসলাম ২০১২ সালে পাঁচথুপি নছরতপুর জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশের পর জালশুকা হাবিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের সরকারি আকবার আলী কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স সম্পুর্ন করেন। ২০২৩ সালে তিনি পাঁচথুপি নছরতপুর জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর হিসেবে যোগদান করেন।
জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ল্যাব অপারেটর পদে যোগদানের পর তথ্য গোপন করে শিক্ষক হিসেবে কারিকুলাম প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ধরা পড়েন। পরে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে হল থেকে বের করে দিয়ে সতর্ক করেন। যা সেই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে অস্বচ্ছতা। সূত্র জানায়, তিনি সাবেক এমপি হাবিবুর রহমানের চাচাতো ভাই ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়ার ভগ্নিপতি হওয়ায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এ পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তিনি বিভিন্ন পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে সেই ভিডিও ধারণ করে টিকটকে ছড়িয়ে দিতেন। যা আইনে অপরাধ।
মঙ্গলবার পি.এন.জে আলী উচ্চ বিদ্যালয় নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ পেজে এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে খান রাতুল নামের এক ফেসবুক ইউজার অনুসূর্য '২২ ব্যাচের বরাত দিয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আশা করেন । এছাড়াও একই লেখা অনুসূর্য '২২ ব্যাচ নামক ফেসবুক আইডিতেও পোষ্ট করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, তিনি আমাদের পাঠ্য বইয়ের ক্লাস না নিলেও বিদ্যালয় কম্পিউটার ল্যাব পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার সহজ করতে সাহায্য করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাব প্রস্তুত, সফটওয়্যারের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সহ কম্পিউটার সরঞ্জামের দেখাশোনা করা এবং শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেন। বলতে গেলে তিনি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তার এমন অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এলাকার লোকজন বলাবলি করছেন তোদের স্কুলের স্যার নাকি টিকটক ভিডিওতে নাচ-গান করে ইন্টারনেটে ছাড়েন? মানুষের এমন প্রশ্ন শুনতে শুনতে আমরা লজ্জিত। টিকটকে তার ভিডিও নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা এমন কাউকে প্রতিষ্ঠানে চাই না, যার রুচিবোধ, আচার-আচরণ সমাজের শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে শুধু পড়ালেখা শেখে বিষয়টা এমন নয়। বিদ্যালয়ের সামগ্রিক কিছু শিক্ষার্থীরা ফলো করে। পড়াশোনার বাইরেও নানান কিছু দেখে ও শিখে।
বিদ্যালয়ের সাবেক কয়েক জন শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, পাঁচথুপি নছরতপুর জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষকদের দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হতো। সেই স্কুলেই এখন এরকম একজন মানুষ ল্যাব অপারেটর হিসেবে চাকরি পেয়েছে কিভাবে? পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ল্যাব অপারেটর হিসেবে সে মূলত অপদার্থের পরিচয় দিয়েছে। এখন ওই স্কুলের শিক্ষার্থী পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। দু-একজনের এরকম খামখেয়ালি আচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানের বদনাম হচ্ছে। দ্রুতই জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, টিকটক ভিডিও তৈরি করা নিয়ে আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি করছি তার কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ে। তার টিকটক আইডিতে নিজেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স সম্মান দাবী করলে অনেকে মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরীরত অবস্থায় এমন বেহাল্লাপনা একটি অপদার্থের কাজ। জ্ঞানহীন এ ধরনের একজন ব্যক্তির সাথে কাজ করাটা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর।
এবিষয়ে পাঁচথুপি নছরতপুর জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম জানান, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর জাহিদুল ইসলামের বেহায়াপনা ভিডিও দেখার পরে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর যেটা করেছে এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। তার তো একটা নীতি নৈতিকতা থাকা উচিত। একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে প্রতিষ্ঠানের সন্মান ও ইমেজ আছে সেই বিষয়গুলো যদি না বোঝেন তাহলে সেটা আসলে দুঃখজনক। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাং, ০১-১০-২৫ ইং
ধুনট বগুড়া প্রতিনিধি।
ফোন, ০১৭১৭১২৭৬৯৫।
Post a Comment